
কেন মার খাচ্ছে মুসলমান? ‘মোমিনের জন্য সুনিশ্চিত বিজয়’- এ কথার মর্মার্থ
ডা. বাবা জাহাঙ্গীর বা-ঈমান আল সুরেশ্বরী
মোমিনের হৃদয়ে আল্লাহর অবস্থান। তাই মোমিনের জন্য সুনিশ্চিত বিজয়, বলেছে কোরান। মাত্র হাতেগোনা তিনশত ষাটজন মোমিন : রাজা গৌরগোবিন্দ নিয়মিত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রায় চল্লিশ হাজার সৈন্যসহ যুদ্ধ করে সম্পূর্ণ পরাজয় বরণ করে আগুনের জ্বলন্ত শিখায় ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছিল। চারশতের কিছু বেশি মোমিন : পরশুরামের মতো প্রতাপশালী রাজা বহু প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সৈন্য নিয়ে শাহ সুলতান বলখিয়া রুমির মতো সাধকের কাছে পরাজয়বরণ করে আত্মহত্যা করেছিল। এ রকমভাবে বহু মোমিনের সুনিশ্চিত বিজয়ের ঐতিহাসিক ঘটনাগুলো তুলে ধরা যায় : খাজা গরিবে নেওয়াজ, গেসু দেরাজ, খানজাহান আলী, আবুল হোসেন খেরকানি এবং নুর মোহাম্মদ দারবন্দির মতো।
মোমিনের জন্য সুনিশ্চিত বিজয়– কোরান-এর এই ঘোষণাটি সামনে থাকা সত্ত্বেও আজ কেন মুসলমানদের উপর আক্রমণ করে নাস্তানাবুদ করে দিচ্ছে আর মারের পর মার খেয়ে চলছে মুসলমান? তা হলে কি আমরা মুসলমান হয়েছি? ইমান এনেছি? আলবাব তথা জ্ঞানী হয়েছি, কিন্তু মোমিন মুসলমান হতে পারি নি। যদি সত্যি মোমিন হতে পারতাম, তা হলে কোরান-এর কথা সত্য হতে বাধ্য। তা হলে আমরা সব রকম ফেরকাবাজি বাদ দিয়ে সব মুসলমান মিলে আমাদের ভুলগুলো কোথায় হচ্ছে তা মিলেমিশে কবে বের করতে শিখব? ফেরকাবাজি করে করে আমাদের মগজ এমনভাবে ধোলাই করে ফেলেছি যে, একসঙ্গে বসার মন-মানসিকতা পর্যন্ত হারিয়ে ফেলেছি।
বরিশালের পীরে কামেল শাহ সুফি বাবা শামসুদ্দিন দেওয়ানের একটি কবিতা পাঠকদের জন্য তুলে ধরলাম। কারণ তিনি প্রথমে শরিয়তের বিরাট আলেম ছিলেন এবং পরে তিনি গালবাতের হালতে থাকতেন। অনেকটা মজ্জুবের মতো। তিনি লিখেছেন-
খোদার দিদার যদি চাও মন, ভজ আগে মুর্শিদের চরণ,
মানুষ রতন কর যতন, চিনতে যদি চাও আপন।
পীর-মোর্শেদ কেবলা কাবা, তার চরণে কর সেবা,
অব-তাগু উসিলা ধর, কর তার সাধন ভজন।
জাহেরাতে মক্কা কাবা, হাকিকতে হয় মানুষ কাবা,
বিশ্বাস কর মোরাকাবা-মোশাহেদায় হয় দর্শন।
মোমিনের কলবে খোদা, দম থাকতে হবে না জুদা,
যথা মোর্শেদ তথা খোদা, বিশ্বাস কর জিন-এনছান।
আগে তুমি মোর্শেদকে মানো, তারপরেতে নিজেকে চিনো,
কোরান-হাদিস আমল কর, খোদা রয় গোপন।
ছহি হাদিসে করে বয়ান, একজন খাঁটি মুসলমান মক্কা কাবা হইতে উত্তম,
সদায় কর তাহার স্মরণ।
অহংকারী দেমাক ছাড়ো, জায়গা চিনিয়া সেজদা করো,
আগে নিয়ত ঠিক করিয়া লও, মানুষ ছাড়া খোদা নাই।