
শয়তান কোথায় থাকে?
ডা. বাবা জাহাঙ্গীর বা-ঈমান আল সুরেশ্বরী
এখন আমরা হাকিকি শয়তান তথা আসল শয়তানের পরিচয় ও ব্যাখ্যা সামান্য দিতে চাই। পবিত্র কোরান অনুসারে শয়তান চার প্রকার :
- ইবলিশ,
- শয়তান,
- মরদুদ এবং
- খান্নাস।
এই চার প্রকার শয়তানকে আল্লাহ্ পাক মাত্র দুইটি স্থানে থাকবার অনুমতি দিয়েছেন। এই দুইটি স্থান ছাড়া এই চার প্রকার শয়তানকে আর কোথাও থাকার অনুমতি দেওয়া হয় নি, এমনকি আল্লাহর সমগ্র সৃষ্টিরাজ্যের আর কোথাও থাকার অনুমতি দেওয়া হয় নি। যে দুইটি নির্দিষ্ট স্থানে এই চারটি শয়তানকে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়েছে সেই স্থান দুইটির নাম হল : জিনের অন্তর এবং মানুষের অন্তর। জিনের অন্তর এবং মানুষের অন্তর ছাড়া এক পা-ও বাহিরে যাবার ক্ষমতা শয়তানের নাই। সুতরাং জিনের অন্তর এবং মানুষের অন্তর ছাড়া এই চারটি শয়তানের থাকবার আর কোন বিন্দুমাত্র স্থান নাই। আকাশ হতে শয়তানেরা যে আগুনের গোলা নিক্ষেপ করতে থাকে তথা ফেলতে থাকে, উহা পৃথিবীর আকাশ নয়, বরং প্রতিটি মানুষের মনের আকাশ। এই মনের আকাশ হতেই শয়তান মানুষকে বিভ্রান্ত করার তরে, দিশেহারা করার তরে, বিপথে নেবার তরে, অনবরত আগুনের গোলা নিক্ষেপ করতে থাকে। চরম সত্যে মানুষের মনের আকাশে শয়তান যে আগুনের গোলা নিক্ষেপ করে, ইহা শয়তানের ডিউটি। মানুষটি দুনিয়াই চায়, না আল্লাহকে চায়, এই পরীক্ষা করার জন্যই এহেন আগুনের গোলা নিক্ষেপ করার কথাটি আসে। যদি পরীক্ষা করার প্রশ্নটি না থাকত তাহলে মনের আকাশে আগুনের গোলা নিক্ষেপ করার প্রশ্নই উঠত না। সুতরাং শয়তান বাহিরে থাকে না, থাকবার বিধান নাই। দুধ আর মাখন যেভাবে দুধের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে, এবং দুধের মাঝে যে মাখন আছে ইহা বুঝবার উপায় থাকে না, সে রকম মানুষের অন্তরে যে শয়তান অবস্থান করছে ইহাও বুঝবার উপায় থাকে না। সুতরাং প্রতিটি মানুষ মনে করে যে সে একা, কিন্তু আসলে সে মোটেই একা নয়। যেহেতু প্রতিটি মানুষের সঙ্গে শয়তানকে পরীক্ষা করার জন্য দেওয়া হয়েছে সেই হেতু মানুষ দুইজন, অনেকটা একের ভিতরে দুইয়ের মত। কিন্তু ইহাও সত্য নহে। কারণ জীবাত্মার সঙ্গে খান্নাসরূপী শয়তান পাশাপাশি অবস্থান করছে, সে রকমভাবে আরেকজন অবস্থান করছে। সেই আরেকজনের নাম হল রূহ তথা পরমাত্মা তথা স্বয়ং আল্লাহ্। তাই প্রতিটি মানুষের শাহারগের নিকটেই আল্লাহ্ আছেন বলে ঘোষণাটি দেখতে পাই। অন্য কোনো জীব-জানোয়ারের শাহারগের নিকটে আল্লাহর অবস্থানটির ঘোষণা কোরানে পাই না। এখানে একটি কথা বলে রাখা ভাল যে, যেহেতু জিন নিয়ে আমাদের কোন কাজ কারবার নাই, তাই আমরা ইচ্ছা করেই জিন বিষয়টিকে বাদ দিলাম, যদিও জিন এবং মানুষকেই আল্লাহর ইবাদত করার কথাটি বলা হয়েছে। সমস্ত সৃষ্টিরাজ্য আল্লাহর ইবাদতে ডুবে আছে, তাই ইবাদত করার আদেশ দেবার প্রশ্নই আসে না। যেহেতু মানুষ এবং জিনকে সীমিত স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি দেওয়া হয়েছে, সেহেতু ইবাদত করার উপদেশটি প্রযোজ্য।
-মারেফতের বানী
-ডা. বাবা জাহঙ্গীর বা-ঈমান আল সুরেশ্বরী