হোম পেজ মুক্ত চিন্তা শয়তান কীভাবে মানুষকে ধোকা দেয়? শয়তানের কাজ কি? Baba Jahangir Books

শয়তান কীভাবে মানুষকে ধোকা দেয়? শয়তানের কাজ কি? Baba Jahangir Books

251
0
শয়তান কীভাবে মানুষকে ধোকা দেয়?

শয়তান কীভাবে মানুষকে ধোকা দেয়?


কোরআনে বর্ণিত চার প্রকার শয়তানের কাজ কি?
ডা. বাবা জাহাঙ্গীর বা-ঈমান আল সুরেশ্বরী

যখন শয়তান অহংকার করে তখন শয়তানের রূপটির নাম হল ইবলিস। বালাসা শব্দটির অর্থ হল অহংকার। ইহা হিব্রু ভাষা, আরবি ভাষা নয়। বালাসা তথা অহংকার শব্দটি বিশেষ্য তথা নাউন, ইবলিস তথা অহংকারী শব্দটি বিশেষণ তথা এডজেকটিভ, সুতরাং শয়তানের আদিরূপ ইবলিস তথা অহংকারী। কারণ আদমকে সেজদা দিবার হুকুমটি সরাসরি অমান্য করার দরুণ সে অহংকারী হয়ে গেল, তথা ইবলিস হয়ে গেল। তাই ইবলিসই হল শয়তানের প্রথম এবং আদিরূপ। মানুষ জীবনধারণের প্রশ্নে যখন বিভিন্ন প্রকার লোভ-লালসার খপ্পরে পড়ে যায় এবং জীবনধারণের প্রশ্নে বৈষয়িক বিষয়ের ঘাত-প্রতিঘাতের আঘাতে প্রতিনিয়ত জর্জরিত হতে থাকে, সেই আঘাত-খাওয়া অবস্থানটির নাম শয়তান। তাই পবিত্র কোরানের যে কোনো পবিত্র সূরা পাঠ করার আগে আমাদের বলতে হয় যে, পাথরের আঘাত-খাওয়া শয়তান হতে আশ্রয় চাই। হাজিরা যে শয়তানকে পাথর ছুড়ে মারে সেই মেজাজি বিষয় হতেই হাকিকি বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। কেউ বুঝতে পারে, কেউ পারে না। বোঝাটাও তকদির, না বোঝাটাও তকদির। সুতরাং চরম পর্যায়ে, আল্লাহর সৃষ্টির মাঝে বিন্দুমাত্র ভুলের অবকাশ নাই। ইহাই পবিত্র কোরানের পবিত্র সূরা মুলকে বলা হয়েছে। কেউ বোঝেন, কেউ বোঝেন না। বোঝাটাও তকদির, না বোঝাটাও তকদির। তকদিরের বলয় হতে আল্লাহর বিশেষ রহমত ছাড়া বেরিয়ে আসা অসম্ভব। জিন এবং মানুষের অন্তর ছাড়া শয়তানের অবস্থানটির কথা যদি অন্য কোথাও আছে বলে কেউ লিখে তো ধরে নিতে হবে যে, সে ইসলামের বিন্দু-বিসর্গও জানে না, কেবল হাউকাউ করে বড় বড় কথার ফুলঝুড়ি ছড়ায়ে, আরবি ব্যাকরণের তেলেসমাতি দেখিয়ে সরল মানুষগুলোকে লিখনির মাধ্যমে বিভ্রান্ত, দিশেহারা করে তুলছে। যে মানুষটি কেবলমাত্র দুনিয়াই চায় এবং যার দুনিয়া চাওয়া ছাড়া আর কোন চাওয়াই থাকে না, তাকে মরদুদ বলা হয়। মরদুদের স্থান হাবিয়া দোজখ। হাবিয়া দোজখের তলা থাকে না। যে মানুষটির দুনিয়া চাওয়ার সীমা থাকে না সেই মানুষটিকে তলা-ছাড়া হাবিয়া দোজখে যেতে হয়। এই মরদুদ শব্দটি পবিত্র কোরানে কয়েকবার পাওয়া যায়। যে শয়তান সর্ববিষয়ে সর্বঘটনায় পিছু পিছু কুমন্ত্রণা দিতে থাকে তার নাম খান্নাস। শয়তানের এই খান্নাসরূপটি ভয়ংকর এবং বিপদজনক। তাই খান্নাসের কুমন্ত্রণা হতে পবিত্র কোরান মুক্তি চাইবার উপদেশ দিয়েছেন। অবাক লাগে যে, শয়তানের এই খান্নাসরূপটি এত ভয়ংকর অথচ সমগ্র কোরানে মাত্র একবার উল্লেখ করা হয়েছে। কাউসার শব্দটি এবং আহাদ শব্দটি সমগ্র কোরানে মাত্র একবার করে উল্লেখ করা হয়েছে, তেমনি খান্নাস শব্দটিও একবার উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ এই তিনটি শব্দের মাঝে গোপন রহস্য লুকিয়ে আছে। এই তিনটি শব্দের অর্থ ব্যাকরণ দিয়ে মোটামুটি একটি ধারণা জন্মাতে পারে, কিন্তু গভীর রহস্য অনুধাবন করতে হলে হৃদয় দিয়ে গবেষণা করতে হয়। সুতরাং পরিশেষে আবার একই পুরোনো কথাটি বলতে চাই যে, জিন এবং মানুষের অন্তর ছাড়া শয়তানের থাকার আর একটি স্থানও নাই। এই খান্নাসরূপী শয়তানটি, যাহা প্রতিটি মানুষের অন্তরে অবস্থান করছে, উহাকে তাড়িয়ে দেবার বহু প্রকার উপদেশের আরেক নাম পবিত্র কোরান। যত প্রকার মোরাকাবা, মোশাহেদা, ধ্যানসাধনা, এবাদত- বন্দেগি, কান্না ও বিলাপ, নফ্সকে ইচ্ছা করে নানা প্রকার কষ্ট দান করা, সবই এই খান্নাসরূপী শয়তানকে তাড়িয়ে দেবার একমাত্র উদ্দেশ্যে। আর দ্বিতীয় কোন উদ্দেশ্য নাই এবং থাকার কোন বিধান রাখা হয়নি। তাই পবিত্র কোরানের সূরা মোমিনের ষাট নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে যে, হে মানুষ, তুমি একা হও এবং একা হয়ে আল্লাহকে ডাক দাও, তাহলে ডাকের জবাব সঙ্গে সঙ্গে পাবে। আরবি ভাষায় দুইজনে ডাক দিলে বলা হয় উদ্উনা, আর একজনে ডাক দিলে হয় উদ্উনি। কোরান উদ্উনি তথা একা শব্দটি ব্যবহার করেছে। উদ্উনা তথা দুইজন থাকলে ডাকের জবাব পাওয়া যাবে না। আমি এবং খান্নাসরূপী শয়তান মিলে দুইজন। কারণ খান্নাসরূপী শয়তান বাহিরে থাকে না, বরং আমার অন্তরেই অবস্থান করছে। সুতরাং আমরা দুইজন। এই দুইজন থাকলে আল্লাহ্ ডাকের জবাব দেন না। এই দুইজনের অবস্থানটাকেই উদ্উনা বলা হয়। খান্নাসরূপী শয়তানকে তাড়াও এবং তাড়াতে পারলে তুমি একা হবে, এবং একা হলে ডাকের জবাব সঙ্গে সঙ্গে পাবে। ইমামুল আউলিয়া বায়েজিদ বোস্তামি (র.) জাবরুত মোকামের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘রব (আল্লাহ্), আমি তোমার প্রতি সন্তুষ্ট।’ রব বললেন, ‘বায়েজিদ, তুমি মিথ্যুক। কেননা যদি তুমি সত্যিই সন্তুষ্ট থাকতে তাহলে সন্তুষ্ট থাকার কথাটি বলতে না।’ বায়েজিদ লজ্জায় মাথা নত করে পুনরায় কঠোর ধ্যানসাধনায় মগ্ন রইলেন। এভাবে দুই বৎসর ধ্যান-সাধনায় মগ্ন থাকার পর বায়েজিদ একদিন বলে ফেললেন, ‘আমিই সুবহানি, সব শান আমারই।’ (‘আনা সুবহানি মাআজামু শানি।’) লা মোকামে প্রবেশ করতে পারলেই এই রকম কথা বলা যায়। সুতরাং নাসুত, মালাকুত ও জাবরুত মোকামে সাধককে পীরের ধ্যানটি করতেই হবে এবং কোনো রহস্যজনক বিষয় দেখতে পেলে আপন পীরের রূপেই দেখা যায়। কিন্তু
সাধক যখন লা মোকামে প্রবেশ করেন তখন দেখতে পান, আপন পীর ডান দিক দিয়ে চলে গেছেন এবং বাম দিক দিয়ে খান্নাসরূপী শয়তানটি ভেগে গেছে। তখনই সাধক নিজের মধ্যে দেখতে পান যে, তাঁর পীরও তিনি এবং তাঁর মুরিদও তিনি। এখানেই তৌহিদ। সুতরাং পীর ধরাও শেরেক, কিন্তু ইহাই শেষ শেরেক। সুতরাং আপন পীরের অবস্থানটি জাবরুত মোকাম পর্যন্ত। লাহুত মোকামে পীর আর থাকেন না। সুতরাং লাহুত মোকামে সাধক যখন প্রবেশ করেন তখন দেখতে পান যে, আপন পীরের আধ্যাত্মিক মূল্য এক টাকাও নয়। সুতরাং আপন পীরের অবস্থানটি তিনটি মোকাম পর্যন্ত। লাহুত মোকামে প্রবেশ করলেই পীর আর থাকেন না এবং পীরের দাম আর এক টাকাও নহে। এই কথাগুলো উঁচু স্তরের নীতিনির্ধারণের কথা। তাই অনেকের ভুল বোঝার সম্ভাবনাটি থেকে যায়। এখানে পীর ধরাটা মুখ্য বিষয় নহে, মুখ্য বিষয়টি হলো আল্লাহর তৌহিদ সাগরে অবগাহন করা।

#মারেফতের বানী
-ডা. বাবা জাহাঙ্গীর বা-ঈমান আল সুরেশ্বরী

Author

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here